এম রায়হান চৌধুুরী উপ সম্পাদক এটিএম নিউজঃ
কক্সবাজার জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে রেজিষ্টার পদে অবৈধভাবে রাতারাতি নিয়োগ পাওয়া উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দা খন্দকার এহেসান হাবিবকে নিয়ে পুরো জেলাজুড়ে তোলপাড় ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। একজন বিতর্কিত লোককে নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়া গোপনে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ‘রেজিষ্টার’ পদে নিয়োগের ঘটনায় জেলার সর্বত্রে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অবৈধভাবে নিয়োগের খবরে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ও অভিভাবকদের মধ্যে জানাজানি হলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করেই ‘নিয়োগ পরীক্ষা বিহীন’ অবৈধ উপায়ে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ‘রেজিষ্টার’ পদে খন্দকার এহেসান হাবিব নামের উত্তরাঞ্চলের এক বিতর্কিত লোককে রাতারাতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত ১ জুন ২০২০ ইংরেজী তারিখ কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার ও ভারপ্রাপ্ত ভিসি প্রফেসর আবদুল হামিদ তার স্বাক্ষরিত বিশ^বিদ্যালয়ের একটি প্যাডে ‘অফিস আদেশ’ এর মাধ্যমে খন্দকার এহেসান হাবিব ‘রেজিষ্টার’ পদে যোগদান করেছেন মর্মে বিশ^বিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে অবগত করেছেন।
এদিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া ‘নিয়োগ পরীক্ষাবিহীন’ রাতারাতি বিশ^বিদ্যালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্টানে রেজিষ্টার পদে উত্তরাঞ্চলের এক বিতর্কিত লোককে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনায় চরম ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও কক্সবাজার জেলাবাসী।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ পরীক্ষা বিহীন রেজিষ্টার পদে লোক নিয়োগের বিষয়ে জানতে গতকাল কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত ভিসি ও ট্রেজারার প্রফেসর আবদুল হামিদের সাথে যোগযোগ করে বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিশ^বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিশ^বিদ্যালয়ের ট্রেজারার ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে রেজিষ্টার পদে বিতর্কিত এক লোককে নিয়োগ দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে রেজিষ্টার খন্দকার এহেসান হাবিবের নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান।
তথ্যানুসন্ধানে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের ‘গরু’ বলার অপরাধে খন্দকার এহেসান হাবিবকে সহকারী রেজিষ্টার পদ থেকে ২০১৭ সালের ফেব্রেুয়ারী মাসের শুরুর দিকে ময়মনসিংহে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ^বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘গরু’ বলার পর সমালোচনা ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মূখে খন্দকার এহসান হাবিবকে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, ৫ ফেব্রেয়ারী ২০১৭ ইংরেজী (রোববার) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ কর্মকর্তা এসএম হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, শনিবার (৪ ফেব্রেয়ারী ২০১৭) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় খন্দকার এহেসান হাবিবের সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৪ ফেব্রেয়ারী ২০১৭ ইংরেজী বিকালে ঢাকার শ্যামলীতে অবস্থিত জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজোঁ অফিসে সিন্ডিকেটের ৫৫তম সভার সিদ্ধান্ত আনুযায়ী সহকারী রেজিষ্টার খন্দকার এহসান হাবিবকে সাময়িক বরখাস্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। আর ঘটনা তদন্তে ২০১৭ ইংরেজী এর ২ ফেব্রুয়ারী পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটিতে আরও দুজন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ সদস্যকে রাখা হয়।
এরপর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএইচএম মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ২০১৮ ইংরেজীর ১৭ ফেব্রুয়ারী সিন্ডিকেট সভায় খন্দকার এহেসান হাবিবকে স্থায়ীভাবে কবি নজরুল ইসলাম বিশ^বিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়।
কবি নজরুল বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্টার (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. হুমায়ুন কবীর জানান, শিক্ষার্থীদের গরু বলে আখ্যায়িত করা, প্রধানমন্ত্রী ও রাজনীতিবিদদের নিয়ে কটূক্তি করার পর খন্দকার এহেসান হাবিবের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি এবং মামলার প্রতিবেদনে অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। আর তাই এহসান হাবীবকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করেছেবিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।
এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মন্তব্য ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করায় তথ্য প্রযুক্তি আইনেও দুটি মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জানা যায়, এহসান হাবিব ২০১৭ ইংরেজীর ৩১ জানুয়ারি সকাল ৮টা ২৪ মিনিটে তার ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, “পাবলিকের অনেক গরু প্রতিদিন আমি আমার বাড়ির মাঠে ঘাস খেতে দেখেছি।”
এরপর ৮টা ৪০ মিনিটে তিনি আরেকটি স্ট্যাটাসে লেখেন, “বিষয়টা প্রাইভেট পাবলিকের না। বিষয়টা হলো মেধার। যোগ্যতার। আপনি পাবলিকের গরু নেবেন নাকি প্রাইভেটের মেধা নেবেন।”
এই স্ট্যাটাসের পর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অন্যদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল।
এদিকে, ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রী ও রাজনীতিবিদদের ‘কটূক্তি’ করার অভিযোগে ২০১৭ ইরেজীর ৪ ফেব্রেয়ারী (শনিবার) রাতে খন্দকার এহসান হাবিবের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় দুটি মামলাও করা হয় ময়মংসিংহ জেলার কোতোয়ালি মডেল থানায়। ময়মনসিংহ পৌরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি দিদারুল ইসলাম বাদী হয়ে খন্দকার এহেসান হাবিব ছাড়াও আরো একজনকে আসামী করা হয়েছিল সেসময়। অপর মামলাটির বাদী ময়মংসিহ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি নুরুল বাকি খান। এই মামলায় এহসান হাবিবকে প্রধান আসামী করে আরো দুইজনকে আসামী করা হয়েছিল।
অপরদিকে ২০১২ সালের ১৬ই অগাস্ট একটি স্ট্যাটাসে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে পাকিস্তাানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর আওয়ামী লীগ নেতাদের ভূমিকা সম্পর্কে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করেছিলেন।
Leave a Reply