ইসলামের বিশুদ্ধ দাওয়াতের মাঝেই জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন; মরহুম অধ্যক্ষ আল্লামা গাজী জাফর আহমদ বদরী(রা:)
সাইফুল মোস্তফা, দৈনিক এটিএম নিউজ:
এই নশ্বর ভূ মন্ডলে যুগ থেকে যুগান্তরে যারা অমর হয়ে আছেন তাদের জীবন পর্যালোচনা করলে পাই তারা কেউ ছিলেন; ধর্মপ্রাচরক, পীরমশায়েক, গবেষক, কবি, সাহিত্যিক,দার্শনিক,বিজ্ঞানি,বুদ্ধিজীবি,চিকিতসক,শিল্পী ইত্যাদি। তারা তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রিতিযোগীতার বিশ্বে পঠনপাঠনে নিজেকে জীবনের উচ্চ মার্গীয়তায় আরোহণ করিয়েছেন,সাথে সাথে সৃষ্টির শ্রষ্টাকে মুগ্ধ করেছেন মানব সেবা এবং শ্রষ্টার পথে সঠিক আহবানের মাধ্যমে।আজ তারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে মহতী অবদানের জন্য খ্যাতিমান।বিশ্ব শান্তির ধর্ম ইসলাম,বানবতার মুক্তির সনদ আল-কোরআন,বেহেস্তের সু সংবাদ দানকারী বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (স:) এর আদর্শের উপর নিজের জীবনকে অতিবাহিত এবং ইসলামের বিশুদ্ধ দাওয়াতের মাঝেই জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন ওস্তাজুল আসাতিজা,মুনাজিরে আহলে সুন্নাত,সুন্নীজমাতের সিংহ পুরুষ,হযরত আলহাজ্ব অধ্যক্ষ আল্লামা গাজী জাফর আহমদ বদরী (রহমাতুল্লাহী আলাই)। ১৯৪৩ সালে সৈকত নন্দিনী কক্সবাজারের চকোরিয়া উপজেলার প্রত্নজনপথ দক্ষিন এশিয়ার বৃহত্তম সমবায় সমিতি অঞ্চল খ্যাত বদরখালীর এক সম্ভ্রান্ত মুসিলম পরিবারে এ ক্ষণজন্মা পুরুষের জন্ম হয়।
পিতা মরহুম আলহাজ বদিউর রহমান,মাতা মরহুমা আলহাজ আমেনা বিবি।
শৈশবে মক্তবে গন্ডি পেরিয়ে বদরখালী মজহারুস সুন্নাহ ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসায় শিক্ষকদের ভালবাসা ও কৃতিত্বের সহিত অধ্যায়ন করেন।পূর্ব পাকিস্তান মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চকোরিয়ার সাহারবিল আনোয়ারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা থেকে ১৯৫৯ সালে দাখিল এবং১৯৬৩ সালে আলিমে কৃতিত্বের সহিত উর্ত্তীণ হন।পরবর্তীতে কোরান ও হাদিসের উপর বিশদ শিক্ষার গ্রহণের জন্য সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ১৯৬৫ সালে মাদ্রাসা বোর্ড হতে মেধাতালিকায় ৯ম স্থান অধিকার করে ফাজিল পাশ করেন। ১৯৬৭ সালে একই মাদ্রাসা থেকে স্বগৌরভে কামিল পাশ করে একাডেমিক পড়া লেখা শেষ করেন।কণ্ঠ সু মধুর থাকায় শিক্ষ জীবনে হুজুরেরা তাকে নায়াত পড়তে অনুপ্রেরণা যোগাতেন হয়ত সেখান থেকেই তিনি ওয়ায়েজ হতে নিজেকে তৈরি করতে শুরু করেছিলেন এবং কোরান,হাদীস,এজমা কিয়াসের উপর গবেষণা শুরু করেন।
পড়া লেখা শেষ করে তাকে বেকার থাকতে হয়িন;যে বছর তিনি পড়ালেখা শেষ করেন সে বছরই (১৯৬৭ সালে ১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নাজিরহাট আহমদিয়া মাদ্রাসায় প্রথম শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরুকরেন ,এর পর চলে আসেন চকোরিয়া আমজাদিয়া রফিকুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসায়। অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ফলশ্রুতিতে মহেশখালী মইনুল ইসলাম মাদ্রাসায় প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে নিজ এলাকায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সঠিক জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করার জন্যে বদরখালী মজহারুস সুন্নাহ সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন,জানা যায় উক্ত প্রতিষ্ঠানে যোগদান করার পর উক্ত প্রতিষ্টানের শিক্ষা ও অবকাঠামুগত ব্যপক উন্নয়ন হয় এবং মাদ্রাসার চতুরপাশে দৃষ্টিনন্দন নারকেল বাগান উনার হাতেগড়া। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে উক্ত মাদ্রাসায় গৌরভের সাথে দ্বিনী শিক্ষার আঞ্জাম দিয়ে গেছেন । ১৯৮৯ সালে তিনি উক্ত মাদ্রাসা থেকে বিদায় নেন। দূর্ভাগ্য হয় সাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের। ১৯টি বছরের লালিত প্রতিষ্টান থেকে তার বিদায় নেয়ায় তৎকালিন মাদ্রাসা প্রসাশনসহ সচেতন মহল দায় এড়াতে পারেননা। গ্রামীণ জীবন থেকে পরবর্তীতে চট্টগ্রামের দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল আমীন বারীয়া মডেল (ফাজিল) মাদ্রাসায় ১৯৯০ যোগদান করে টানা ২০০০সাল পর্যন্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে সু-দীর্ঘ ৩৩ বছরের কর্ম জীবনের সমাপ্ত করেন।
৩৩ বছরের কর্ম জীবনে তিনি শুধু শিক্ষকতা পেশায় নিজেক সিমাবদ্ধ রাখেননি। র্ধমময় সাধারণ মানুষের আহব্বানে গ্রামে-গঞ্জে তিনি কোরান হাদীসের বয়ান করার জন্যে ছুটে যেতেন।তিনি চট্টগ্রাম পতেঙ্গা স্টীলমিল জামে মসজিদের প্রাত্তন খতীব ছাড়াও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি এবং মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। উনার প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় আজ অনেক মাদ্রাসা, এতিম খানা ও হিফজ খানা প্রতিষ্ঠিত।সমাজিক ধর্মীয় কর্ম আঞ্জাম দেয়ার জন্য তিনি “আল্লামা বাদরী ফাউন্ডশন” নামে সংগঠন প্রতিষ্টা করেন। মানুষ গড়ার এই শ্রদ্ধাভাজন কারিগরের আজ হাজার হাজার ছাত্র সমাজের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্টিত হয়ে দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত।
পৃথিবীতে সাধারণ মানুষের ইসলামের বিশুদ্ধ দাওয়াতের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে অবদান অসামান্য।এ দেশের সুন্নি আন্দোলনের অন্যতম অভিভাবক বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন আল্লামা বদরী সুন্নিয়ত ভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে তিনি তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে,ইসলামবিরোধী আক্বীদা নয়,মানবরচিত যাবতীয় মতবাদ পরিত্যাগ করে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের প্রতি নি:শর্ত আত্মসমর্পণের মধ্যেই মানুষের ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন একমাত্র মুক্তি নিহিত।সারাটা জীবন তিনি মহান রব্বুল আলামীনের দ্বীন প্রতিষ্ঠায় রাসুলেপাক সল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ বাস্তবায়নে ব্যয় করেছেন।আল্লাহর কালাম এবং হাদিসে রাসুলের শিক্ষা দিয়ে হাজার হাজার ছাত্রদেরকে ইলমের খিদমতগার বানিয়েছেন।দুর্গম জনপদেও,যেখানে মানুষের মাঝে ইসলামের সঠিকতর জ্ঞানের আলো পৌছেনি তাদের কাছেও গিয়ে মানুষকে সচেতন করেছেন।উনার সবচেয়ে বড় গুনছিলো ফিতনার এ যুগে বিনা দলিলে কথা বলে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতোনা।তিনি কেবল একজন বিখ্যাত ধর্মীয় বক্তাই ছিলেন না শুধু,এ দেশের কয়েকজন প্রসিদ্ধ কিতাবি জ্ঞানের অধিকারীদের একজন।
তার জ্ঞান র্ধমের সঠিক পথের খেদমতকারী জেনে চট্টগ্রামের বৃহত্তম দরবার গরাঙ্গীয়া বড় হুজুর-ছোট হুজুর কেবলা সু নজর তার উপর অর্পিত হয়েছিল। প্রবীণ এ আলেমেদ্বীনের অক্লান্ত পরিশ্রমী প্রচেষ্টায় গ্রামকেন্দ্রিক সেই কৃষক থেকে সাধারণ মানুষ আজ সুন্নীয়তকে জানতে পেরেছেন।প্রচারবিমুখ এ মানুষটির বর্ণাঢ্য জীবনে অহংকার কি তার বিন্দুমাত্র পরিলক্ষিত হয়নি।রাসুলপ্রেমের জলন্ত এক উদাহরণ হয়ে থাকবেন।
উনার প্রত্যাশা ছিলেন সুন্নিয়ত ভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে মানুষের আক্বীদা-আমলের সংস্কারের মাধ্যমে সমাজের সার্বিক সংস্কার সাধনেই সুন্নিয়তের সমাজ ও রাষ্ট্র বির্নিমাণ সম্ভব।
দ্বীনের খিদমতকারী এ মহান ব্যক্তি ২১.০১.২০১৭ দিবাগত রাত ১১.৩০ মিনিটে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ডাকে সাড়া দিয়ে ইহ জীবন ত্যাগ করেন।ইন্নালিল্লাহী ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। চীর বিদায়ের খবর মুর্হুতের মধ্যে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ সবখানে সড়িয়ে পড়লে শোকাহত হয় হাজারো ভক্ত। তার প্রথম জানাযার নামায চট্টগ্রাম,দ্বিতীয় চকোরিয়া জয়নাল আবদিন মহিউচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসয় এবং শেষ জানাযার নামায নিজ গ্রাম বদরখালি ঈদগাহ মযদানে হাজার হাজার শোকাহত মানুষের অংশগ্রহণ অনুষ্টিত হয়। স্মরণ কালের শ্রেষ্ট জনাযায় পরিণত হয়। অসংখ্য হক্কানী পীর এবং ওলামায়ে কেরামসহ লাখো মানুষের উপস্থিতি লক্ষণীয়। তিনি যে খানে চীর নিন্দ্রায় শায়িত হবেন সেই ছনুয়া পাড়া মসিজদ টি তার সু নজরের কারনে নতুনভাবে মসজিদ ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মিত হয়। তার দেখানো স্থানেই আলেমে দ্বীনেক চীর নিদ্রায় শায়িত করা হয়। তার মৃতুতে সমাজিক রাজনৈতক সংগঠন সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শোক প্রাকাশ করেন এবং স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন। আজ হুজুরের ৪র্থ মৃত্যু বার্ষিকী ফালিত হচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়াগায়।মহান আল্লাহর কাছে বিনীত প্রার্থনা জানাই সব কিছু কবুল করে ওনাকে বেহেস্তে আলা মাকাম দান করুক-আমিন।
##এস.এম.ছাইফুল মোস্তফা,বিএ(অনার্স)এম.এ
সাংগঠনিক সম্পাদক- আল্লামা বদরী ফাউন্ডেশন
সভাপিত-বদরখালী সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ।
তথ্য সূত্র:-ইমরান বিন বদরী-চেয়ারম্যান আল্লামা বদরী ফাউন্ডেশন।
Leave a Reply